যেসব কারণে বিখ্যাত কুমিল্লার রসমালাই

প্রথম প্রকাশঃ মে ১০, ২০১৭ সময়ঃ ৬:৫৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৭:১৬ অপরাহ্ণ

কুমিল্লার মনোহরপুর রাজরাজেশ্বরী কালীমন্দিরের পাশে আসল মাতৃভান্ডারের দোকান

কুমিল্লার রসমালাই। দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী যার চাহিদা। কী এমন রহস্য যে ভোর থেকে লাইন দিয়ে রসমালাই কিনতে হবে? এমনই চাহিদা যে মাত্র এক ঘণ্টায় শত কেজির রসমালাই শেষ। অথচ কুমিল্লার মনোহরপুরের রাজরাজেশ্বরী কালীমন্দিরের পাশেই আছে আরো দুটি মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। একটি ভগবতী পেড়া ভাণ্ডার। আরেকটি শিতল ভাণ্ডার। কিন্তু সব আকর্ষণ মাতৃভাণ্ডারের দিকে। অথচ রসমালাই বিক্রিতে এই ৩ প্রতিষ্ঠানেরই খ্যাতি আছে। তারপরও ভোর ৬টা থেকেই মাতৃভাণ্ডারে ক্রেতাদের ভিড়। অথচ পাশের অন্য দুটি দোকানে ক্রেতা নেই বললেই চলে। কিন্তু মাতৃভাণ্ডারের রসমালাই এক ঘণ্টায় শেষ। আবার নতুন করে তৈরি করে দুপুরে বিক্রি শুরু হয়। প্রতিদিন ভোর থেকে প্রায় সারা দিন ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে কুমিল্লার এই মাতৃভাণ্ডারে। দিনে রাতে মাতৃভাণ্ডারের রসমালাই বিক্রি হয় প্রায় ৬ থেকে ৭শ কেজি।

উনিশ শতকের প্রথম দিকে ত্রিপুরা রাজ্য তথা কুমিল্লার ঘোষ সম্প্রদায় দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে ক্ষীর বানিয়ে তাতে ছোট আকারের শুকনো ভোগ বা রসগোল্লা ভিজিয়ে যে মিষ্টান্ন তৈরি করে, তা ক্ষীরভোগ নামে পরিচিতি পায়। ক্রমান্বয়ে এই ক্ষীরভোগ রসমালাই নামে পরিচিত হয়ে উঠে। ১৯৩০ সালে কুমিল্লা শহরের মনোহরপুরে মাতৃভান্ডার নামে দোকানে ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত এই রসমালাই বিক্রি শুরু হয়। খনিন্দ্র সেন ও মণিন্দ্র সেন নামের দুই ভাই রসমলাই তৈরি করে বিক্রি শুরু করেন। খুব অল্প দিনের মধ্যে রসমালাইয়ের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। হয়ে ওঠে কুমিল্লার ঐতিহ্যের অংশ। আগে মাটির হাঁড়িতে বিক্রি হতো রসমালাই এরপর পলিথিনের ঠোঙ্গা আর বর্তমানে প্লাস্টিকের পাত্রে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে এ মাতৃভান্ডার পরিচালক হলেন শংকর সেন এবং ব্যবস্থাপক অনির্বাণ সেনগুপ্ত।

যেভাবে তৈরি হয়:

কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী রসমালাই তৈরির প্রক্রিয়া খুবই সহজ। একটি পাতিলে বা করাইয়ে এক মণ দুধ দুই ঘণ্টা ধরে জ্বাল দিলে তা ঘন হয়ে ১৩-১৪ কেজি ক্ষীর তৈরি হয়। এর দুধ থেকে পাওয়া ছানার সঙ্গে কিছু ময়দা দিয়ে খামির তৈরি করে বানানো হয় ছোট ছোট গুলি বা রসগোল্লা। এক মণ দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন ক্ষীর তৈরি করে তাতে ছোট গুটি বা শুকনো রসগোল্লা দিয়ে ১৪ কেজির মতো রসমালাই বানানো যায়। এক মণ দুধে এর বেশি তৈরি করলে রসমালাইয়ের আসল স্বাদ আর থাকে না।

ভেজাল রসমালাই যেভাবে তৈরি হয়:

ভারতীয় এক কেজি ‘শক্তি’, ‘মধু’ পাউডার দুধ দিয়ে ১০ কেজি দুধ বানানো যায়। এজন্য অনেক অসাধু ব্যবসায়ী গরুর আসল দুধ ব্যবহারই করে না। তাছাড়া যে ছানা দিয়ে রসমালাইয়ের গুটি বানানো হয় তাতে এক কেজি ছানাতে এক ছটাক পরিমাণ ময়দার স্থলে এক পোয়া ময়দা মেশানো হয়। কিন্তু এতে রসমালাইয়ের সত্যিকারের স্বাদ থাকে না। তাতে তিন কেজির জায়গায় চার কেজি গুটি হয়। কিন্তু এতে রসমালাইয়ের সত্যিকারের স্বাদ আর থাকে না।

অন্যদিকে এক মণ দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে যেখানে ১৪ কেজি রসমালাই বানানো যায়। কিন্তু ভেজালকারীরা এক মণ দুধ দিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি রসমালাই বানায়। আসল দুধের সঙ্গে এক কেজি পরিমাণ পাউডার দুধ আর আধা কেজি ময়দা মেশানো হয়। এর ফলে কিছুক্ষণ জ্বাল দিলেই দুধ ঘন হয়ে যায়। ১৪ কেজির স্থলে পাওয়া যায় ৩০ থেকে ৩৫ কেজি রসমালাই।

কুমিল্লার রসমালাইয়ের দোকান:

স্বাদে-গন্ধে ও মানে মাতৃভাণ্ডারই শ্রেষ্ঠ। কিন্তু দেশের কোথাও এর শাখা নেই। মাতৃভান্ডার ছাড়াও বিখ্যাত রসমালাই বিক্রি হয় কুমিল্লার মনোহরপুরের রাজরাজেশ্বরী কালীমন্দিরের পাশে ভগবতি পেড়া ভান্ডার আর শীতল ভান্ডারে। আর কান্দিরপাড়ের জলযোগ আর জিলাস্কুল রোডে পোড়াবাড়ি মিষ্টি দোকানের রসমালাইও প্রসিদ্ধ।

অন্যদিকে কুমিল্লার সর্বত্র মাতৃভাণ্ডারের নামে যে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রসমালাই বিক্রি করে যার সবই নকল রসমালাই। এতে ক্রেতারা প্রতিনিয়ত হচ্ছেন প্রতারণার শিকার। রসমালাইয়ের উদ্ভাবক মাতৃভাণ্ডারের নামের সামনে-পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীরা নকল করে কুমিল্লা’, ‘কুমিল্লার’ ইত্যাদি নাম ব্যবহার করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লার পদুয়ার বাজার থেকে আলেখারচর পর্যন্ত, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় অসংখ্য মিষ্টির দোকান রয়েছে। দোকানগুলোর সাইনবোর্ডে কোনোটিতে লেখা আছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত’, কোনোটিতে লেখা আমাদের একমাত্র শাখা এটি। তারা নষ্ট করছে ঐতিহ্য ও কুমিল্লার আসল ও অতুলনীয় স্বাদের রসমালাইয়ের সুনাম। এছাড়া রাজধানী ঢাকায় যেসব রসমালাই বিক্রি হয় কুমিল্লার রসমালাই নামে, তার বেশিরভাগই নকল। মাতৃভাণ্ডারের খাঁটি রসমালাই নামে যা বিক্রি হয় তার সঙ্গে আসল রসমালাইয়ের স্বাদ, গন্ধ ও ঘনত্বে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।

কুমিল্লার রসমালাইয়ের স্বাদে আলাদা বৈশিষ্টের কারণে সারাদেশে এর গ্রাহক চাহিদা আছে প্রচুর। গ্রাহকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে- ভেজাল খাবারের ভিড়ে খাঁটি খাবারের নিশ্চয়তা নিয়ে রাজধানী ঢাকাতে ‘ফেমাস বিডি’ সরবরাহ করছে কুমিল্লার মনোহরপুরের রাজরাজেশ্বরী কালীমন্দিরের প্রকৃত মাতৃভাণ্ডারের রসমালাই। ফেমাস বিডি গ্রাহকের সুবিধার্থে ১০০% কোয়ালিটি সম্পূর্ণ মাতৃভাণ্ডারের রসমালাই পার্সেলযোগে বাসায় পৌঁছে দিয়ে থাকে। কুমিল্লার বিখ্যাত মাতৃভান্ডারের রসমালাই পেতে আজই যোগাযোগ করুন। ই-মেইল:[email protected] অথবা মোবাইল: ০১৭২০১১৯৩০৩।

প্রতিক্ষণ/এডি/সাই

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G